ইমন সরকার, ভালুকা উপজেলা প্রতিনিধি
ভালুকায় ব্যতিক্রমী বিয়ে: গ্রামবাসীর সম্মিলিত ভালোবাসায় নতুন জীবনের পথে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সুমন
ভালুকায় ঘটেছে এক নজিরবিহীন মানবিক ঘটনা সকলের ভালোবাসায় ও সম্মিলিত প্রয়াসে নতুন জীবনের পথে যাত্রা শুরু করলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সুমন। পরিবারহীন এই তরুণের বিয়েকে ঘিরে তিনদিনব্যাপী যে জমকালো আয়োজন হয়েছে, তা শুধু একটি বিয়ে নয় এ যেন একটি সম্পূর্ণ এলাকার স্বপ্ন, আবেগ ও মানবিকতার প্রকাশ।
গত ৪ এপ্রিল (শুক্রবার), ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার দক্ষিণ মনোহরপুর গ্রামের ইয়াং স্টার ক্লাবের আয়োজনে এবং এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও এতিম সুমনের সঙ্গে শ্রীপুর উপজেলার যোগীরছিট গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের কন্যা ফাহিমা আক্তারের বিবাহ সম্পন্ন হয়।
এই বিয়েতে দেনমোহর নির্ধারিত হয় এক লক্ষ টাকা, যার মধ্যে নব্বই হাজার টাকার গহনা এবং দশ হাজার টাকা নগদ অর্থ প্রদান করে ক্লাবের সদস্যরা। পুরো আয়োজনকে সফল করতে ক্লাবের সদস্যরা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেন এবং গ্রামবাসী তাদের পাশে থেকে সমস্ত ব্যয়ভার বহন করেন।
বিয়ের তিনদিনব্যাপী আয়োজনে ছিল
প্রথম দিন: গায়ে হলুদ
দ্বিতীয় দিন: বিয়ে ও বরযাত্রা
তৃতীয় দিন: বউভাত ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, বরযাত্রায় অংশ নেয় দুই শতাধিক বরযাত্রী, যারা ব্যান্ডপার্টির তালে তালে পায়ে হেঁটে কনের বাড়িতে যান, আর বউভাত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রায় আট শতাধিক অতিথি। প্রত্যেক মেহমানকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত যত্নের সাথে, যা সবার মনে দাগ কেটে যায়।
দক্ষিণ মনোহরপুর ইয়াং স্টার ক্লাবের উপদেষ্টা রমজানুল ইসলাম মামুন বলেন, “আমরা এর আগে ভালুকায় এমন মানবিক আয়োজন দেখিনি। সুমনের বিয়েতে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন এলাকার মানুষ। ক্লাব ও গ্রামবাসীর মিলিত প্রচেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে।”
ক্লাবের সভাপতি শান্ত জানান, “এই ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজন শুধু একটি দায়িত্ব নয়, এটি ছিল আমাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। আমরা চাই সুমনের জন্য একটি কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হোক, যাতে তার জীবন হয়ে উঠে আরও সুন্দর ও স্থিতিশীল।”
মেহমান হিসেবে উপস্থিত ঝরনা আক্তার বলেন, “এরকম আনন্দঘন, ভালোবাসায় ভরা বিয়ের অনুষ্ঠান আগে কখনো দেখিনি। অংশ নিতে পেরে আমরা গর্বিত।”
অপর মেহমান মোছাঃ মীম আক্তার বলেন, “ইয়াং স্টার ক্লাবের সব সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমকে আমি সাধুবাদ জানাই। ভবিষ্যতে তাদের আরও মহতী কাজে এগিয়ে যেতে দেখার প্রত্যাশা করি।”
এই মহতী উদ্যোগের প্রশংসা করে হবিরবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার দেলোয়ার হোসেন ধনু বলেন, “আমার জানা মতে, এত বড় পরিসরে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর জন্য এমন আয়োজন দেশে খুবই বিরল। এই আয়োজন প্রমাণ করে, ভালোবাসা ও একতাই পারে অসম্ভবকে সম্ভব করতে। আমি নবদম্পতির জন্য সুখী দাম্পত্য জীবন কামনা করি।”
এই গল্প কেবল একটি বিয়ের নয় এটি একাত্মতা, ভালোবাসা, মানবিকতা এবং সম্মিলিত উদ্যোগের প্রতীক। ভালুকার দক্ষিণ মনোহরপুর প্রমাণ করে দিয়েছে, একজনের ‘আপন’ হতে হলে রক্তের সম্পর্ক প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন হৃদয়ের টান।